আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে সেই জাহালমকে ঘরে তুললেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুর্নীতি দমন কমিশনের ভুলে বিনাদোষে তিন বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পাওয়া পাটকল শ্রমিক জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তুলেছেন তার মা মনোয়ারা।

রবিবার রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জাহালমকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামে যান তিনি। ভোর ৪টার দিকে বড় ভাই শাহানুর মিয়ার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান জাহালম।

রাতের আঁধারে মোবাইলের আলোয় জাহালমকে দেখেই ছুটে আসেন মা মনোয়ারা। ছেলেকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে জড়িয়ে ধরেন তিনি। কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহালমের ভাইবোন ও স্বজনরাও। পরে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘কার মাথায় বাড়ি দিছিলাম যে আমার এত বড় সর্বনাশ করছিল।’ পরে কারামুক্ত জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলেন মা মনোয়ারা।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে বিনাদোষে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে নরসিংদীর পাটকল শ্রমিক টাঙ্গাইলের সন্তান জাহালমকে। গতকাল রোববারই সোনালী ব্যাংকের ওই অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। কারাগারে কাগজ পৌঁছানোর পর জেলসুপার তাকে মুক্তি দেন।

প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে। এ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে ‘ভুল আসামির’ কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে তলব করে হাই কোর্ট। সে অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম গতকাল সকালে আদালতে হাজির হন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর ছিলেন জাহালমের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। আদালত জাহালমকে দুদকের ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে আদালতে উপস্থিত এক উপ-কারামহাপরিদর্শকে আদালত বলেন, ‘আপনারা আজই জাহালমকে রিলিজ করে দেবেন। দুদক এর খরচ দেবে।’